আসহাবে কাহাফের ঘটনা (গুহার সঙ্গীদের কাহিনি) বিস্তারিত
আসহাবে কাহাফের ঘটনা কুরআনের সূরা আল-কাহাফ (সূরা ১৮, আয়াত ৯-২৬)-এ বর্ণিত হয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যা আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদের জন্য নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ঘটনার পটভূমি
প্রাচীনকালে এক অত্যাচারী ও মুশরিক রাজা ছিল, যার নাম সম্ভবত ডাকিয়ানুস (Decius)। সে নিজেকে দেবতা হিসেবে দাবি করত এবং তার রাজ্যে সবাইকে মূর্তিপূজা করতে বাধ্য করত। যারা এক আল্লাহর ইবাদত করত, তাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হতো।
সে সময় কিছু যুবক ছিল, যারা আল্লাহর তাওহীদে বিশ্বাসী ছিল। তারা সমাজের অন্যায় ও শিরক মেনে নিতে পারেনি এবং আল্লাহর একত্ববাদে অবিচল ছিল। তারা মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে দাঁড়াল, ফলে রাজা তাদের হত্যার আদেশ দিল।
গুহায় আশ্রয় নেওয়া
যুবকরা রাজার হাত থেকে বাঁচতে একটি গুহায় (কাহাফ) আশ্রয় নিল। তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করল:
"হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে তোমার পক্ষ থেকে রহমত দান করো এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজ সঠিকভাবে পরিচালিত করো।"
—(সূরা আল-কাহাফ, ১৮:১০)
আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া কবুল করলেন এবং অলৌকিকভাবে তাদের ৩০৯ বছর (চন্দ্রবর্ষ অনুযায়ী) গুহায় নিদ্রায় রাখলেন।
আল্লাহর অলৌকিক ব্যবস্থা
আল্লাহ তাদের নিদ্রা সম্পর্কে বলেন—
"আর তুমি যদি সূর্যকে দেখ, যখন তা উদিত হয় তখন তাদের গুহা থেকে ডান দিকে সরে যায় এবং যখন অস্ত যায় তখন বাম দিকে চলে যায়, আর তারা গুহার প্রশস্ত স্থানে ছিল। এটি আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি।"
—(সূরা আল-কাহাফ, ১৮:১৭)
তাদের শরীর যেন পচে না যায়, সেজন্য আল্লাহ ব্যবস্থা করেছিলেন—
- সূর্যের আলো সরাসরি তাদের গায়ে লাগেনি, ফলে তাদের দেহ সংরক্ষিত ছিল।
- তারা এক পাশে কাত হয়ে ঘুমাত, যাতে শরীর অচল না হয়ে যায়।
- তাদের কুকুরটিও গুহার বাইরে শুয়ে ছিল এবং লোকেরা ভয় পেত, যাতে কেউ গুহার কাছে না আসে।
পুনর্জাগরণ ও সমাজের পরিবর্তন
৩০৯ বছর পর আল্লাহ তাদের জাগিয়ে তুললেন। তারা ভাবল, হয়তো একদিন বা তার কিছু অংশ ঘুমিয়েছে।
তারা ক্ষুধার্ত হয়ে পড়লে একজনকে খাবার কেনার জন্য বাজারে পাঠানো হয়। যাওয়ার সময় তারা বলে, সতর্ক থেকো, যেন কেউ আমাদের চিনতে না পারে।
কিন্তু বাজারে গিয়ে সে বুঝতে পারে, চারপাশের সমাজ পুরোপুরি বদলে গেছে। তারা যে পুরনো মুদ্রা নিয়ে গিয়েছিল, সেটি বহু শতাব্দী আগের ছিল!
অলৌকিক ঘটনার প্রচার ও তাদের শেষ পরিণতি
লোকজন বিষয়টি জানার পর রাজা ও জনগণ গুহার সামনে জড়ো হলো। তখনকার রাজা এক আল্লাহর উপাসক ছিলেন, তাই তিনি এটাকে আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন হিসেবে গ্রহণ করলেন।
এরপর আল্লাহ তাদের আবার ঘুমিয়ে দিলেন এবং তারা মৃত্যুবরণ করেন। জনগণ তাদের স্মরণে একটি মসজিদ নির্মাণ করে।
গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা
১. আল্লাহ ঈমানদারদের রক্ষা করেন: তারা এক আল্লাহর প্রতি অবিচল ছিল, তাই আল্লাহ তাদের রক্ষা করেছেন।
2. কেয়ামতের পুনর্জীবন সম্ভব: দীর্ঘ ৩০৯ বছর নিদ্রায় থাকার পর জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে আল্লাহ দেখিয়েছেন, পুনরুত্থান (কেয়ামত) তাঁর জন্য সহজ।
৩. সত্যের পথে ধৈর্য ধরতে হবে: তারা কঠিন পরীক্ষা সত্ত্বেও সত্যের ওপর অটল ছিল।
৪. আল্লাহর রহমতের উপর নির্ভর করা উচিত: যুবকেরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছিল, এবং আল্লাহ তাদের সাহায্য করেছিলেন।